উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে পুরুষের সঙ্গে একই সারিতে নারীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি, আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে নারীদের স্বাবলম্বী করা এবং নারীর ক্ষমতায়নে নেয়া নানামুখী কার্যক্রমকে টিকিয়ে রাখতে এলজিইডি সচেষ্ট হয়েছে জেন্ডার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে। আর এ-লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে ‘উন্নয়নে নারী (WID)’ এই ধারণার উপর ভিত্তি করে ২৮ সদস্য বিশিষ্ট নারী প্রকৌশলী ফোরাম গঠন করা হয়, যেখানে নারী প্রকৌশলীদের সমস্যার বিষয়ে সময়ে সময়ে আলোচনা করা হয়। পরবর্তীতে সর্বস্তরের নারীদেরকে উন্নয়নের স্রোতধারায় অধিকতর সম্পৃক্তকরনের জন্য ১৯৯৬ সালে ‘নারী প্রকৌশলী ফোরাম’ কে ‘নারী ফোরাম’ হিসেবে পুনর্গঠন করা হয়। এক্ষেত্রে ফোরামকে আরও একটু সুসংগঠিত করে সদস্য সংখ্যা ৪০ এ উন্নীত করা হয় এবং নিয়মিত মাসিক সভার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ১৯৯৭ সালে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ও জাতীয় নারী উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনার আলোকে এলজিইডি ও এর প্রকল্পের কার্যক্রমে জেন্ডার উন্নয়ন বিষয়টিকে আরও বেশী গুরুত্বারোপ করার লক্ষ্যে ২৫/০৭/২০০০ তারিখে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট ‘জেন্ডার ও উন্নয়ন ফোরাম’ তৈরী করা হয় । এলজিইডির প্রকল্পগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে জেন্ডারকে মূলধারায় আনতে, বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এবং জেন্ডার সংক্রান্ত নতুন নতুন বিষয় উদ্ভাবন ও এসব বিষয়ে শুদ্ধ চর্চার জন্য একটি প্লাটফরম তৈরীর উদ্দেশ্যে একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে গঠিত হয় এই ফোরাম। সাধারণভাবে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ফোরামের সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে বিশেষ প্রয়োজনে যে কোনও সময় ফোরামের সভা বসতে পারে।
মাঠ পর্যায়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক পরিকাঠামোতে জেন্ডার সমতা অর্জনের লক্ষ্যে ২০০২ সালে পাঁচ বছর মেয়াদি (২০০২-২০০৭) প্রথম জেন্ডার সমতা কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০৮-২০১৫ সালের জন্য উন্নীত করা হলেও তা বাস্তবায়নে লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে মধ্যমেয়াদে ২০১১ সালে সামগ্রিক বিষয়টি পর্যালোচনা এবং একই বছরে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে ইতিপূর্বে প্রণীত সমতা কৌশলটি হালনাগাদের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ায় সেটিকে সময়োপযোগী করা হয়েছে এবং এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮-২০১৫ মেয়াদের কর্মপরিকল্পনাটিও সংশোধন করে ব্যবহার উপযোগী কর্মপরিকল্পনা (২০১৩-২০১৫) মেয়াদে প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রতিটি সেক্টরে প্রকল্পের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বয় করে জেন্ডার সমতা কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়। এলজিইডি সদর দপ্তর এবং মাঠ পর্যায়ে এই কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা ব্যবহার করা হচ্ছে।
জেন্ডার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের অংশ হিসেবে এলজিইডির অভ্যন্তরে নারীদের কাজের সুস্থ ও সহায়ক পরিবেশ তৈরী করা হয়েছে। নারীরা যাতে নির্বিঘ্নে ও চিন্তামুক্তভাবে তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন এজন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্র, নির্দিষ্ট করা হয়েছে নামাজের স্থান, রয়েছে পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিরাপদ ও নির্ঝঞ্জাট যাতায়াত নিশ্চিত করতে রয়েছে যানবাহন।
মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং জেন্ডার বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ফলে এলজিইডির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এই বোধ তৈরী হয়েছে যে, নারীরা শুধু নারীই নয় আমাদের সমাজেরই একটি অংশ। কাজে-কর্মে তাঁরাও রাখতে পারেন পুরুষের সমান অবদান। এর ফলে এলজিইডির ভেতরের কাজের পরিবেশ এমন হয়েছে যে এখানে নারীরা নিজেদেরকে একজন মানুষ হিসেবে ভাবতে পারছেন। নারীকে সমপর্যায়ে গ্রহণের মানসিকতার বোধ তৈরী হচ্ছে পুরুষদের মাঝে, ফলে নারীরা কাজ করতে পারছেন নিশ্চিন্ত মনে নিরাপদভাবে। আর এটা সম্ভব হয়েছে জেন্ডার সমতাকরণে এলজিইডির নিষ্ঠা ও প্রতিশ্রুতির কারণে।