Wellcome to National Portal
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১st সেপ্টেম্বর ২০২১

অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির প্রতীক - প্রয়াত প্রধান প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক স্মরণে


প্রকাশন তারিখ : 2021-09-01

২০ জানুয়ারি ১৯৪৫ - ১ সেপ্টেম্বর ২০০৮

 

প্রয়াত প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক গ্রামবাংলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি দূরদৃষ্টি সম্পন্ন দেশ ও মানুষের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল এক সফল নীতিপরিকল্পনার রূপকার। কামরুল ইসলাম সিদ্দিক একাধারে প্রকৌশলী ও মুক্তিযোদ্ধা। জীবন বাজি রেখে দেশ-মাতৃকার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও এর স্মৃতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিককে দেশ বিনির্মাণে সংকল্পবব্ধ করে তুলেছিল।

 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান-এর সোনার বাংলার গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তিনি পথনকশা প্রণয়ন করেন। আস্থার সঙ্গে এগিয়ে যেতে থাকেন। ব্যক্তিমানুষের পরিচয় ছাপিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন একটি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)-এর শক্ত ভিত প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক-এর হাতে রচিত।

 

প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো নির্মাণের এক প্রবাদপুরুষ। প্রকৌশল আর উন্নয়ন দর্শনকে তিনি নিপুন দক্ষতায় এক সুঁতোয় বেঁধে দিয়েছিলেন। ষাটের দশকের কুমিল্লা মডেল বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে গৃহীত পল্লীপূর্ত কর্মসূচি ধাপে ধাপে এলজিইডিতে রুপান্তরিত হয়, যা কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের নিরলস প্রজ্ঞা, পরিশ্রম এবং নেতৃত্বের গুণে সম্ভব হয়েছিল।

 

প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের উন্নয়ন দর্শনের কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল- গ্রামের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সহায়ক অবকাঠামো তৈরি। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন গ্রামের উন্নয়নের জন্য পরিবহন ও বিপণন ব্যবস্থার সমন্বিত উন্নয়ন প্রয়োজন। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে গ্রামীণ সড়ক, সেতু-কালভার্ট, হাট-বাজার ও গ্রোথসেন্টার উন্নয়ন অপরিহার্য।

 

তিনি আশির দশকে দেশজুড়ে হাট-বাজার ও গ্রোথসেন্টারগুলোর সঙ্গে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করেন। বর্তমানে দেশব্যাপী যে শক্তিশালী সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে তার গোড়াপত্তন হয়েছিল এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে।  আজ জনগণ সহজেই উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিয়ে যেতে পারে। উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য এবং বেশি পণ্য উৎপাদনে আগ্রহ পায়। দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক সূচকসমূহে এ সড়ক নেটওয়ার্ক অসামান্য অবদান রেখে চলেছে।

 

প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক কর্মপ্রবাহকে গতিশীল করার লক্ষ্যে আধুনিক  নতুন নতুন প্রযুক্তি সংযুক্ত করেছিলেন। গত শতাব্দির ৮০’র দশকে তৎকালীন এলজিইবিতে কম্পিউটার সংযোজন করা হয়,  যা সরকারি অধিদপ্তরসমূহের মধ্যে অগ্রগণ্য। একই সঙ্গে তিনি দেশে প্রথম এলজিইডিতে জিআইএস প্রযুক্তির সংযোজন করেন।

 

প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক চীন সফরে গিয়ে দেখেন বর্ষাকালে নদীর পানি ধরে রেখে সেচ কাজে ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি দেশে রাবার ডাম টেকনোলজি নিয়ে আসেন, যা পরবর্তীতে নদী ও খালের ওপর বাসানো হয়। রাবার ডাম টেকনোলজি  ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশে কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পরিবেশ সুরক্ষায় অবদান রাখছে।

 

প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছিলেন। তিনি পরিবেশ উন্নয়নে বায়োগ্যাস প্রযুক্তি সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেন। এলজিইডি নির্মিত সড়কের পাশে বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

 

উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে জেন্ডার সমতার বিষয়টি কামরুল ইসলাম সিদ্দিক বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। তিনি সংস্থায় নারী প্রকৌশলী নিয়োগ এবং অবকাঠমো উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে নারী শ্রমিকদের সম্পৃক্তকরণের বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। এলজিইডির বর্তমান জেন্ডার ও উন্নয়ন ফোরামের প্রতিষ্ঠা তারই চিন্তাপ্রসূত।

 

বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের ছিল বিশেষ যোগাযোগ দক্ষতা। তিনি সহজেই উন্নয়ন সহযোগীদের আকৃষ্ট করতে পারতেন। তাঁর ব্যক্তিত্বের ছিল বিশেষ দ্যুতি । তিনি অনেক জটিল সমস্যার সহজ সমাধান দিতে পারতেন।

 

একদিকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক অন্যদেিক আরবান এন্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং-এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি তাঁর পেশাগত সক্ষমতাকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যায়। তিনি ছিলেন গ্রহণোন্মুক্ত এক ব্যক্তিত্ব। দেশ-বিদেশে সফর করে মানুষের জন্য যা উপকারী মনে হয়ে হয়েছে তিনি তা গ্রহণ করেছেন। তিনি সমন্বয়বাদী প্রকৌশলী। প্রকৌশল বিদ্যার পঠন-পাঠনকে মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে দারুনভাবে সংযুক্ত করেছিলেন।

 

কামরুল ইসলাম সিদ্দিক অসংখ্য পেশাগত ও মানবিক গুণের সমষ্টি। সর্বোপরি, তাঁর দেশপ্রেম তাঁকে কালোত্তীর্ণ করেছে। তিনি বাংলাদেশের প্রকৌশলী ও উন্নয়ন  ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ধ্রুবতারা হয়ে বেঁচে আছেন।

 

প্রয়াত প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের বিদেহী আত্নাার মাগফেরাত কামনা করছি।